চতুর্থ প্রজন্ম- Fourth Generation (১৯৭১ খ্রি. - বর্তমান)

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৭১ - বর্তমান) হলো সেই কম্পিউটার, যা মাইক্রোপ্রসেসর এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর আকার ছোট, শক্তিশালী এবং দক্ষতায় উন্নত। এটি ডিজিটাল কম্পিউটারের ইতিহাসে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছে, কারণ মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবনের মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো আরও সাশ্রয়ী, বহনযোগ্য এবং কার্যকর হয়ে উঠেছে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

  • মাইক্রোপ্রসেসর: এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন হলো মাইক্রোপ্রসেসর। মাইক্রোপ্রসেসর হলো একটি ছোট চিপ, যা সিপিইউ (Central Processing Unit) এর সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
  • ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC): প্রথম প্রজন্মের তুলনায় IC-এর মিনিaturization এবং উন্নত ডিজাইন চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারকে ছোট, শক্তিশালী এবং কার্যকর করেছে।
  • পার্সোনাল কম্পিউটার (PC): চতুর্থ প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো পার্সোনাল কম্পিউটারের (PC) উদ্ভাবন, যা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য।
  • গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI): এই প্রজন্মে কম্পিউটারগুলোতে গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) এবং মাউস ব্যবহৃত হয়, যা কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ এবং ইন্টারেক্টিভ করে তোলে।
  • নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেট: চতুর্থ প্রজন্মে কম্পিউটারগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে, যা তথ্য বিনিময় এবং যোগাযোগের জন্য একটি বিপ্লবী পরিবর্তন আনে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ:

Intel 4004 মাইক্রোপ্রসেসর:

  • ১৯৭১ সালে ইন্টেল কোম্পানি প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর (Intel 4004) তৈরি করে। এটি ছিল একটি ছোট চিপ, যা পূর্ণ সিপিইউ হিসাবে কাজ করতে পারত।
  • এর উদ্ভাবন চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সূচনা করে এবং এটি কম্পিউটার প্রযুক্তিতে এক বিপ্লব নিয়ে আসে।

IBM PC (Personal Computer):

  • ১৯৮১ সালে IBM প্রথমবারের মতো একটি বাণিজ্যিক পার্সোনাল কম্পিউটার (PC) তৈরি করে, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
  • এটি ব্যক্তিগত, অফিসিয়াল এবং শিক্ষামূলক কাজের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

Apple Macintosh:

  • ১৯৮৪ সালে অ্যাপল Macintosh কম্পিউটার উন্মোচন করে, যা প্রথমবারের মতো GUI (Graphical User Interface) এবং মাউসের সমন্বয় ব্যবহার করে।
  • এটি কম্পিউটার ব্যবহারকে আরও সহজ এবং ইন্টারেক্টিভ করে তোলে এবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে কম্পিউটারকে জনপ্রিয় করে তোলে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা:

  • ছোট এবং বহনযোগ্য: মাইক্রোপ্রসেসর এবং উন্নত IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারগুলোকে ছোট, হালকা এবং বহনযোগ্য করে তুলেছে।
  • দ্রুত এবং শক্তিশালী: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং শক্তিশালী। তারা জটিল গাণিতিক কাজ, ডেটা বিশ্লেষণ, এবং গ্রাফিকাল প্রসেসিং দ্রুততার সঙ্গে করতে পারে।
  • সাশ্রয়ী: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য, যার ফলে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ে।
  • নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেট: এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা সমন্বিত, যা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ এবং তথ্য বিনিময়কে সহজ করে তুলেছে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা:

  • সফটওয়্যার নির্ভরতা: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে, যার কারণে সফটওয়্যার সমস্যা বা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।
  • উচ্চ তাপ উৎপাদন: মাইক্রোপ্রসেসর এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন IC-এর কারণে কম্পিউটারগুলো উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে, যা কুলিং ব্যবস্থার প্রয়োজন সৃষ্টি করে।
  • সাইবার সিকিউরিটি ঝুঁকি: নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেটের বিস্তারের কারণে সাইবার সিকিউরিটির ঝুঁকি বাড়ে, এবং তথ্য চুরি বা সাইবার হামলার সমস্যা দেখা দেয়।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • বৈপ্লবিক পরিবর্তন: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং সাধারণ মানুষকে কম্পিউটারের ব্যবহারের সুবিধা দেয়।
  • বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ব্যবসা, বিজ্ঞান, শিক্ষা, এবং বিনোদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • ডিজিটাল যুগের সূচনা: এই প্রজন্মের কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়, যা আমাদের জীবন এবং কাজের পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে।

সারসংক্ষেপ:

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার হলো কম্পিউটিং প্রযুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন। মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবন এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের মিনিaturization চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোকে ছোট, দ্রুত, এবং সাশ্রয়ী করে তুলেছে। এটি আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং ডিজিটাল যুগের সূচনা করেছে, যা এখনও বর্তমান সময়ে ব্যবহারিত হচ্ছে এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

Content updated By
Promotion